কেমন ছিলেন তাঁরা - খাদিজা (রাঃ)

কেমন ছিলেন তাঁরা - হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর প্রিয়তম স্ত্রী খাদিজা (রাঃ)

পবিত্র কুরআন নাযিলের শুরুর ঘটনাটা যদি খেয়াল করি যে, রাসুল (সাঃ) হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন।

তখনও তিনি নবী হিসেবে পরিচিত হননি।

জিবরাঈল (আ) ওহি নিয়ে আসলেন।

রাসুল (সাঃ) ভয় পেয়েছিলেন।

তিনি ছুটে গিয়েছিলেন, উনার স্ত্রী খাদিজা (রাঃ) এর কাছে। “আমাকে বস্ত্রাবৃত করো, আমাকে বস্ত্রাবৃত করো”।

খাদিজা (রাঃ) কোনো কথা না বলেই প্রথমে কম্বল জড়িয়ে দিয়েছেন, যেমনটা রাসুল(সাঃ) করতে বলেছেন।

এরপর হেরা গুহায় ওহি নাযিলের ঘটনা শুনে বলেছিলেন, “আল্লাহ কক্ষনো আপনাকে অপমান করবেন না। কেননা আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে আপনি সুসম্পর্কে রক্ষা করে চলেন। অভাবগ্রস্তদের অভাব মোচনের চেষ্টা করেন। অসহায়দের আশ্রয় প্রদান করেন। মেহমানদের আদরযত্ন করেন, অতিথিদের আতিথেয়তা প্রদান করেন এবং ঋণগ্রস্তদের ঋণের দায় মোচনে সাহায্য করেন, যারা সত্যের পথে থাকে তাদেরকে আপনি সাহায্য করেন; নিশ্চয়ই আল্লাহ আপনাকে অপদস্থ করবেন না।” [১] পরবর্তিতে খাদিজা(রাঃ) স্বামীকে নিয়ে গেলেন, আরাকা বিন নওফেলের কাছে যিনি ওই মুশরিক সমাজে থেকেও পূর্বেকার নবী-রাসুলের উপর আসা ওহির ব্যাপারে কিছুটা ধারণা রাখতেন।

এখানে কয়েকটা বিষয় খেলার করার আছে।

  • রাসুল (সাঃ) তাঁর কঠিন সময়ে ছুটে গেছেন স্ত্রী খাদিজা(রাঃ) এর কাছে। সেটা এমন সময়ে যখন
    • উনার চাচা আবু তালিব বেঁচে ছিলেন, যিনি সেই দশবছর বয়েস দাদা মারা যাওয়ার পর থেকে উনার অভিভাবক ও মাথার উপর ছায়া হয়ে ছিলেন।
    • বেঁচে ছিলেন আরাকা ইবনে নওফেল - যিনি ওহির ব্যাপারে কিছুটা ধারণা রাখতেন। স্বামী হিসেবে স্ত্রীকে এরকমই দরকার - সকল পরিস্থিতেই যার কাছে গেলে স্থিরতা পাওয়া যাবে।
  • রাসুল (সাঃ) যখন হেরাগুহা থেকে আসলেন, খাদিজা (রাঃ) কোনো কথা না বলে স্বামী যা বলেছেন তাই করেছেন (চাদর দিয়ে আবৃত করা)। এখানে স্ত্রীদের জন্য হেকমত এই যে, পরিস্থিতি বুঝে আগে প্রশ্ন না করে কখন কখন শুধু অনুসরণ করে যাওয়াই সময়ের দাবি।
  • পরবর্তিতে রাসুল(সাঃ) একটু স্থির হলে উনার কাছে ডিটেইলস শুনেছেন। আগেই অস্থির হয়ে প্রশ্ন করা শুরু করেন নি। স্ত্রী হিসেবে জানতে চাইবেন, তবে সেটা সুস্থির হয়ে সুযোগ বুঝে।
  • ডিটেইলস শুনে উনি রাগ করেন নি বরং সান্ত্বনা দিয়েছেন। সেই সান্ত্বনাও কোনো ফাকাবুলি না বরং রাসুল(সাঃ)-কে কেন আল্লাহ অপমান করবেন না সেসবের কারণ হিসেবে উনার অনেকগুলো কাজ/গুনের উল্লেখ করেছেন। বর্তমানের অনেকেই এরকম পরিস্থিতে হয়ত বলে উঠত - বলেছিলাম, ওখানে যাবেন না। এবার হল ত! যান আরও বেশি করে। বাড়ি কেন আসছেন? ওখানেই থাকেন! ইত্যাদি।
  • যেসব কাজের উল্লেখ করে খাদিজা (রাঃ) উল্লেখ করেছেন, কেন সেসবই উল্লেখ করলেন? কারণ উনি নিজে সেসব কাজকে ভালো মনে করতেন, সেসবে রাসুল(সাঃ)-কে পূর্ণ সমর্থন দিতেন ও প্রাউড ফিল করতেন। অন্যথায় এরকম কঠিন পরিস্থিতিতে এসব উল্লেখ করতেন না। স্বামীর কাজে প্রাউড ফিল করাটা স্বামীকে আর ভালো করতে উদ্বুদ্ধ করে, প্রেরণা যোগায়।

এরকম আরও অনেককিছুই আমাদের জন্য শিক্ষণীয় লুকিয়ে আছে আমাদের এসব তারাদের জীবনের প্রতিটি ঘটনায়।

আজ এপর্যন্তই। আবারও অন্য কোন ঘটনা নিয়ে কথা হবে অন্য পর্বে। সে পর্যন্ত মাআসসালাম।

[১] আর-রাহিখুল মাখতুম [পৃষ্ঠা ৯৫-৯৬]

Share: X (Twitter) Facebook LinkedIn